ধর্মপাশায় পুলিশের ছত্রছায়ায় জমি দখল:ওসি জানতেন,তবু নীরব
নিজস্ব প্রতিবেদক
ধর্মপাশা উপজেলার গাছতলা বাজারে জমি দখলকে কেন্দ্র করে এক পরিবার মারাত্মক হামলার শিকার হন কিন্তু পুলিশ উপস্থিত থাকলেও নেননি কোন ব্যবস্থা,উল্টো হামলার সময় পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
ঘটনার পর থানায় গিয়ে মামলা করতে চাইলে ধর্মপাশা থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি) শুরু করেন নানা তালবাহানা, এমনটিই অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের।
উক্ত ঘটনাটি ঘটেছে গাছতলা বাজারের পুরনো একটি চার রুমের টিনের দোকান ঘরকে কেন্দ্র করে। মোঃ আলতু মিয়া বহু বছর আগে নিজ মালিকানাধীন জমিতে নির্মাণ করেন দোকানটি এবং ভাড়া দেন একই এলাকার ওয়াদুদ মিয়াকে।
সব চলছিল ঠিকঠাক কিন্তু হঠাৎ করে ওয়াদুদ মিয়া বিগত কয়েক মাস হতে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন এবং দোকানটির মালিকানা দাবি করেন। এ নিয়ে একাধিক গ্রাম্য সালিশিও হয়েছে, সেখানে তাঁকে জমির কাগজপত্রাধী দেখাতে বললে ওয়াদুদ মিয়া প্রকাশ্যে বলেন, কোন কাগজ নাই তাতে কি, জমি আমি ছাড়ব না,আমার দখলে আছে, থাকবে।
বিগত ১২ জুন ২০২৫ ইং সন্ধা সাতটায় আলতু মিয়া তার পরিবার ও স্থানীয় গণ্যমান্যদের নিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ আলোচনায় বসেন ওয়াদুদ মিয়া হঠাৎই পুলিশকে মুঠোফোনে জানান, কিছুক্ষণের মধ্যেই চার সদস্যদের একটি পুলিশ দলও ঘনাটাস্থলে পৌঁছায়।
তবে এর পর যা ঘটে তা ছিল ভয়ংকর ও লজ্জাজনক। পুলিশকে উপস্থিত রেখে লালধন(আলতু মিয়ার ছোট ভাই) এর উপর হামলা করেন, নারী সদস্যদের গায়েও তোলেন হাত,চুল ধরে টানাহ্যাঁচড়া ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করেন বলেও জানা যায়।কিন্তু পুলিশ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন, বাঁধা দেননি,বরং পুলিশ নিজেরাই লালধনকে মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ও প্রত্যক্ষদর্শী লোকজন।
ঘটনার পরদিন ভুক্তভোগীরা থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে ওসি প্রথমে মামলা নিচ্ছেন বলে আশ্বাস দেন,পরে নানা অজুহাতে তা পিছিয়ে দেন এমনকি এখনো মামলা আমলে নেননি বলে ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ।
এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায় মোঃ ওয়াদুদ মিয়া স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের ঘনিষ্ঠ বলে ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পূর্বেও এমন পক্ষপাতমূলক ঘটনায় অভিযুক্ত হয়েছেন। ভুক্তভোগী পরিবার এখন পুরোপুরি আতঙ্কিত, নারীরা ঘর থেকে বের হতে ভয় পাচ্ছে, স্থানীয়রা মুখ খোলতে সাহস পাচ্ছে না,এ যেন এক ভয়ানক আতংক।
একজন আইনজীবীর মতামত হলো, জমি বিরোধ বা দখলের ঘটনায় পুলিশ নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হলে তা ফৌজদারি অপরাধকেও সহায়তা করার শামিল। এ ক্ষেত্রে ওসির ভূমিকা তদন্তযোগ্য এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।
এ ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ধর্মপাশা উপজেলা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক আজিজুল হক বলেন,ঘটনা সবই সত্য। লালধন চলে গিয়েছিল। পুলিশের কথায় আমি তাকে ডেকে এনেছি। পুলিশেই প্রথম লালধনের গায়ে হাত তোলে তার পরপরই ওয়াদুদ ও তার লোকজন তাদের উপর চড়াও হশ,পরে পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করেন।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত ওয়াদুদ মিয়ার সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলেন, জমি আমার দখলে আছে। দখল স্বত্বে মামলা করেছি।আদালত যা রায় দিবেন তা তিনি মেনে নিবেন।
ধর্মপাশা থানা তদন্ত কর্মকর্তা এনামুল হকের কাছে পুলিশের নিরব ভূমিকা ও মামলা না নেওয়ার কথা জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ ও পুলিশ জড়িত থাকার ব্যাপারে অস্বীকার করেন এবং বলেন যে তিনি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত আছেন এখন ভুক্তভোগী লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নিবেন।
জমি দখলের ঘটনাগুলো এখন স্থানীয় চাঁদাবাজ ও সক্ষমদের নিয়ন্ত্রণে, আর পুলিশ হয়ে উঠেছে তাদের সাহায্যকারী বাহিনী। ধর্মপাশার এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়েছে, আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী কখনো কখনো নির্যাতনের নীরব সঙ্গী হয়ে উঠেছে।